বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মিয়ানমারে অভাবের তাড়নায় কিডনি বিক্রি করছেন ধনীদের কাছে

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের সাড়ে ৫ কোটি মানুষের অর্ধেক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার তিন বছর পরের এ হার ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তার লড়াই, ব্যাপক বেকারত্ব ও মৌলিক জিনিসের আকাশচুম্বী দামে বিপর্যস্ত দেশটির মানুষ। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রি করছেন তারা। ফেসবুকে কিডনি কেনাবেচার বেশ কয়েকটি গ্রুপও রয়েছে। কয়েক বছরে দেশটিতে অঙ্গ বিক্রির পোস্টগুলো খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বছরব্যাপী তদন্তে দেখা গেছে, মিয়ানমারের ঋণে জর্জরিত অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে ধনীদের কাছে কিডনি বিক্রি করছেন। এজেন্টদের সহায়তার নথি জাল করে পরিবারের সদস্য সেজে ক্রেতা-বিক্রেতা ভারতে গিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছেন।

সিএনএন অন্তত তিনটি বার্মিজ ভাষার ফেসবুক গ্রুপে অঙ্গ বিক্রির প্রস্তাবের পোস্ট খুঁজে পেয়েছে। এমনই একজন পণ্য ডেলিভারির চাকরি করা মং মং (ছদ্মনাম)। বিরোধী গোষ্ঠীর জন্য পণ্য পরিবহনের সন্দেহে ২০২২ সালের শেষ দিকে তাঁকে আটক করেছিল সামরিক জান্তা। কয়েক সপ্তাহ তাঁকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এ সময় সংসার চালাতে তাঁর স্ত্রীকে ঋণ করতে হয়েছিল। অবশেষে মং মুক্তি পেলেও চাকরি হারান। তাঁর পরিবার ঋণে ডুবে গিয়েছিল। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তিনি নিজের কিডনি বিক্রির প্রস্তাব দেন।

মং বলেন, ‘সেই মুহূর্তে আমি অনুভব করেছি, জীবন খুব কঠিন। টাকার জন্য ডাকাতি বা খুন করা ছাড়া আমার বাঁচার কোনো উপায় নেই। আমার স্ত্রী আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিল। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়েছে।

কয়েক মাস পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মং ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির জন্য ভারত যান। এক ধনী চীনা বার্মিজ ব্যবসায়ী ১ কোটি বার্মিজ কিয়াট (৩ হাজার ৮০ ডলার) দিয়ে তাঁর কিডনি কিনেছিলেন। এ অর্থ মিয়ানমারের শহুরে পরিবারের গড় বার্ষিক আয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া ২৬ বছর বয়সী এপ্রিল সিএনএনকে বলেন, শরীরের একটি অংশ বিক্রি করা প্রত্যেকের জন্যই খুব কঠিন সিদ্ধান্ত। কেউ এটা করতে চায় না। কিন্তু আমার আর কোনো বিকল্প নেই।

মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন এপ্রিল। কিন্তু তাঁর মাসিক ১০০ ডলার বেতন রাজনৈতিক সংকট ও ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এর মধ্যে তাঁর খালার ক্যান্সার ধরা পড়ে। একদিন ফেসবুকে পোস্ট দেখে তিনি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ৪৯ বছর বয়সী ইয়াঙ্গুনের এক ব্যক্তি ৩ হাজার ৭০০ ডলারে তাঁর কিডনি কিনতে চেয়েছেন। নথি জাল করে এপ্রিলকে ওই ব্যক্তির বড় মেয়ে হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এপ্রিল উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন, অস্ত্রোপচার টেবিলে তিনি মারা যেতে পারেন। তবে অনুভব করেন, এখান থেকে ফিরে আসা এখন আর সম্ভব নয়। এপ্রিলের পরিবার এখনও তাঁর কিডনি বিক্রির পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারেনি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION